গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর ধর্মাবলম্বী আহমদিয়া/কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একেক সময় একেক ধরনের শ্লোগান দিয়ে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার হীন চক্রান্তে লিপ্ত। সেসব ধোঁকাবাজীর একটি শ্লোগান উঠে এসেছে “ইসলামি নলেজ” নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে। কাদিয়ানী মুবাল্লিগ ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী নামক এক অসাধু বক্তা তার লেকচারে দাবি করে, “আহমদী ও অ-আহমদী মুসলমানদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। তারা যেই ইসলামে বিশ্বাস করে, আমরাও সেই একই ইসলামে বিশ্বাস করি। কালিমা, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্ব…
آمَنْتُ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِه وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّه من الله تَعَالَى وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ….
দর্শক! যতগুলো বিষয়ে একজন আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত সুন্নী মুসলমান বিশ্বাস রাখে, সবগুলোতে আমরাও বিশ্বাস রাখি। আমরাও সুন্নী। সে অর্থে, যে অর্থে হযরত মুহাম্মাদ সা. আমাদেরকে সুন্নত শিখিয়েছেন। তফাৎটা হচ্ছে, একটি ভবিষ্যদ্বাণীকে কেন্দ্র করে। হযরত আকদাস মুহাম্মাদ সা. বলেন……………”
ইসলাম ও কাদিয়ানী কি একই ধর্ম?
উপরোক্ত বক্তব্যে মুবাল্লিগ ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী বলেছে, “আহমদী ও অ-আহমদী মুসলমানদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই…।” অথচ আহমদিয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতা, যাকে নিয়ে এসব ভ্রান্ত আলোচনা উদ্ভব ঘটেছে সেই গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর প্রথম খলিফা হাকীম নূরুদ্দীন সাহেব স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “আমিতো আমাদের আর অ-আহমদীদের মাঝে মৌলিক পার্থক্য আছে বলে মনে করি। (দেখুন মির্যা কাদিয়ানীর পুত্র বশীর আহমদ এম.এ রচিত- ‘কালিমাতুল ফসল’ পৃষ্ঠা: ৩১)
কাদিয়ানীদের দ্বিতীয় খলিফা মির্যাপুত্র বশিরুদ্দীন মাহমুদের এ বক্তব্যটি পড়ে দেখুন! তিনি বলেন, “হযরত মাসীহে মাওউদ আ. এর মুখ থেকে শোনা কথাগুলো এখনো আমার কানে ধ্বনিত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, এটা ভুল কথা যে, অন্যদের (মুসলমানদের) সঙ্গে আমাদের বিরোধ শুধু ঈসা আ. এর মৃত্যু বা আরো কিছু শাখাগত মাসআলায়।
হযরত বলেছেন, আল্লাহ তায়ালার সত্তা, রাসুলে কারীম সা., কুরআন, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত- মোটকথা প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ রয়েছে। (মির্যা মাহমুদের জুমার খুতবা, সূত্র: পাঞ্জাবের কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক আলফযল’ তারিখ: ৩০/০৭/১৯৩১ঈ. পৃষ্ঠা-৭, কলাম-১)
এছাড়াও তাদের বই ‘মজমুয়ায়ে ফাতাওয়ায়ে আহমদিয়া’র এ উদ্ধৃতি লক্ষ্য করুন-
তিনি বলেন, “এটাতো সম্পূর্ণ ভুল কথা যে, আমাদের আর অ-আহমদীদের (মুসলমানদের) মধ্যে কোনো শাখাগত মতভেদ আছে। কেননা কোনো ‘মামুর মিনাল্লাহ’ (আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট)-কে অস্বীকার করা ‘কুফর’ হয়ে যায়। আমাদের বিরোধীগণ (মুসলমানগণ) মির্যা সাহেবের ‘মামুরিয়্যত’ (আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হওয়াকে) অস্বীকার করেন। বলো, এটা শাখাগত মতপার্থক্য কী করে হয়? (নাহজুল মুসল্লা ফাতাওয়া আহমদিয়া: ১/২৭৪)
যাহোক, আমাদের মুসলমানদের নিকটও ইসলাম ও মুসলমানদের সঙ্গে কাদিয়ানীদের মতভেদ মৌলিক, শাখাগত নয়। আর স্বয়ং কাদিয়ানীদের বক্তব্যও এমনই যে, তাদের ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য মৌলিক, শাখাগত নয়। অতএব পরিষ্কার হয়ে গেল যে, ইসলাম ও কাদিয়ানী দুটি আলাদা ধর্ম!
পাঠক! চিন্তা করে দেখুন-
১. আহমদী/কাদিয়ানী ধর্ম ও ইসলাম এক ধর্মের নাম নয়। বরং ইসলাম ও কাদিয়ানী ভিন্ন দুটি ধর্মের নাম। একটি হক তথা সত্য। অপরটি ভ্রান্ত তথা মিথ্যা। আলো-অন্ধকার যেভাবে একত্রিত হতে পারে না, ঠিক তেমনিভাবে ইসলাম ও কাদিয়ানী ধর্ম কখনোই এক হতে পারে না।
২. ইসলাম ধর্মে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত আর ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী কাদিয়ানীদের নামায, রোযা, হজ্ব ও যাকাত এক নয়।
৩. ইসলাম ধর্মের আক্বীদা আল্লাহর উপর ঈমান, ফেরেশতাদের উপর ঈমান, আসমানী কিতাবসমূহের উপর ঈমান, রাসুলদের উপর ঈমান ইত্যাদি বিষয়ের উপর ঈমান আর কাদিয়ানীদের তথাকথিত উপরোক্ত বিষয়ের উপর এক নয়।
৪. মুসলমানদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সুন্নী মুসলমান হওয়া আর কাদিয়ানীর মুখরোচক সুন্নী মুসলমান হওয়ার দাবী কখনই এক নয়।
আল্লাহ তাআলা সর্বস্তরের মুসলিম জনগণকে কাদিয়ানী ধর্মালম্বী অসাধু বক্তাদের প্রতারণামূলক বক্তব্য থেকে হেফাজত করুন। আমিন।